আইপিএল সেভেনের দ্বিতীয় প্লে-অফে গতকাল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গিয়েছে প্রীতি জিনতার চেন্নাই। তাই ফাইনাল ম্যাচটা হতে যাচ্ছে প্রীতি জিনতা বনাম শাহরুখ খান! গতকালের স্কোরবোর্ড যখন বলছিল একটা টিম ছয় ওভারে ১০০ করেছে তখন তা অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছিল। প্রথম ইনিংসে পাঞ্জাব ব্যাটিং যদি অবিশ্বাস্য হয়, তা হলে সুরেশ রায়নার ২৫ বলে ৮৭ রানটাকে কোন বিশেষণ দেয়া যায়? রায়না গতকাল ওয়াংখেড়েতে যে ইনিংসটা খেলল, তা এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট। জর্জ বেইলি ওকে দুর্দান্ত ভাবে রান আউটটা না করলে কিন্তু রবিবার চিন্নাস্বামীতে দু'বছর আগের আইপিএল ফাইনালের অ্যাকশন রিপ্লে হত। ম্যাচের পরে তো বীরেন্দ্র শেহবাগও বলল, রায়না যেভাবে ব্যাট করছিল, তাতে ও নিজে থেকে কোনও ভুল না করলে পাঞ্জাব আজ জিততে পারত না।
অবশ্য তার আগে শেহবাগ যে ব্যাটিংটা করেছে, সেটাও ভোলার নয়। এ বছর আইপিএলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে নির্বিকার ভাবে তিনি বললেন, ওর খারাপ ফর্মের জন্য নাকি ওর ছেলেকে নিয়ে স্কুলের বন্ধুরা মজা করত। শুক্রবার ৫৮ বলে সহবাগের ১২২ রানের পর নিশ্চয়ই জুনিয়র শেহবাগ ঠাট্টা-ইয়ার্কি থেকে মুক্তি পাবে! আটটা ছয়, বারোটা চার, স্ট্রাইক রেট দুশোরও উপর! একেই বলে ক্লিক করা! তা-ও আবার যে সে ম্যাচে নয়। আইপিএল প্লে-অফের মতো মঞ্চে। প্রথম কয়েকটা ম্যাচে যে ব্যাটিংয়ের ট্রেলার দেখিয়েছিল শেহবাগ, তার পূর্ণাঙ্গ ফিল্মটা গতকাল দেখেছে চেন্নাই। বীরু নিজেই জানালেন, প্রথম দিককার ম্যাচে ও নিজের পার্টনারদের পরামর্শ দিতে গিয়ে নিজের ব্যাটিংয়ের উপর ফোকাস করতে পারছিল না। আজ তাই প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিল যে, বাকিরা যা করে করুক। আমি শুধু নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবব। এ বার অন্তত টিমকে একটা ম্যাচ জেতাবই জেতাব। শেহবাগ আর পরে রায়নার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, আইপিএলে বোধহয় কোনও স্কোরই আর নিরাপদ নয়। ১৪ ওভারে একটা টিম ১৯০ তুলে দিচ্ছে। আজ তো মনে হচ্ছিল চেন্নাই সেই রেকর্ডটাও ভেঙে দেবে। ওই অবস্থা থেকে যে চেন্নাই ব্যাটিং এভাবে ভেঙে পড়বে, সেটা অপ্রত্যাশিত বললেও কম বলা হয়। ধোনি যে ম্যাচ শেষে ও রকম একটা বিস্ফোরণ করে গেল, সেটা আমার কাছে অন্তত বেশ ন্যায্য মনে হচ্ছে। যা-ই হোক, ফাইনালের কথায় আসি। পাঞ্জাবকে এর আগে দু'বার হারিয়েছে কেকেআর, তাই নাইট ভক্তরা হয়তো ফাইনালে প্রীতির টিমকে পেয়ে খুশিই হয়েছেন। তবে কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিই। গত বুধবার ইডেনে যে পাঞ্জাবকে দেখেছেন তাদের খেলতে হয়েছিল লো, স্লো উইকেটে। সেখানে বেঙ্গালুরুর উইকেট অনেক বেশি ব্যাটিং সহায়ক। ইডেনের মতো ওখানে বল পড়ে থেমে থেমে যাবে না। ব্যাটে আসবে। সেই পিচে সাকিব আল হাসান বা পীযূষ চাওলা কিন্তু ইডেনের মতো টার্ন পাবে না। বরং ওখানে মর্নি মর্কেল বা উমেশ যাদব অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারবে। চেন্নাইয়ের বোলিংকে নিয়ে যেভাবে ছেলেখেলা করেছে শেহবাগ, মর্কেলের সামনে সেটা অত সহজেও পারবে না। বীরুর ফুটওয়ার্ক এখন অত দ্রুত নয়। মর্কেলের পেস আর বাউন্স ওকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। সোজা কথায়, রবিবারের ফাইনাল হতে চলেছে পাঞ্জাব ব্যাটিং বনাম নাইট বোলিং। পাঞ্জাবের প্রত্যেক ব্যাটসম্যান অসাধারণ স্ট্রোক প্লেয়ার। ওদের মধ্যে দু'জন সেট করে গেলে দু'শো তুলে দেওয়া কোনও ব্যাপার নয়। বিশেষ করে সহবাগ এখন যা ফর্মে আছে, তাতে ম্যাক্সওয়েল বা মিলারের চেয়ে ও কোনও অংশে কম বিপজ্জনক নয়। কেকেআরের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেহবাগের উইকেটটা নেওয়া। ম্যাক্সওয়েল শর্ট-পিচড বলের বিরুদ্ধে বেশ অস্বচ্ছন্দ। স্পিনারের বিরুদ্ধে তো ম্যাক্সওয়েল-মিলার দু'জনেই। রবিবার বরং মনন ভোরা বা ঋদ্ধিমান সাহার অবদান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ২০ ওভারে ২২৬-৬ (সহবাগ ১২২, নেহরা ২-৫১)
চেন্নাই সুপার কিংস ২০ ওভারে ২০২-৭ (রায়না ৮৭, আওয়ানা ২-৫৯)।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩