ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান না করে এসইসি’র ক্ষমতা বৃদ্ধির বিয়ষটিকে পুরোপুরি সাধুবাদ জানাতে পারছেন না সচেতন মহল। দেশের পুঁজিবাজারে একাধিকবার ভয়াবহ কারসাজি হলেও জড়িতদের শাস্তির আওতায় না এনে নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধিকে অনেকে অহেতুক সান্ত¦না বলে মনে করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরাও এ বিষয়টিতে খুব খুশি হতে পারছেন না।
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সংশোধন) বিল ২০১২’ এবং ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের সংশোধিত খসড়া জাতীয় উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এর পর তা চূড়ান্ত যাচাই বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বিল ২টি জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাশ হয়। এর ফলে এখন থেকে এসইসি যে কারো ব্যাংক একাউন্ট তলব করতে পারবে। এর আগে এ ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের ছিল।
এছাড়া ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের সংশোধনটিও কণ্ঠভোটে পাশ হওয়ায় তা কার্যকর হলে, কমিশনের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, কমিশনার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিনা অনুমোতিতে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করলে জেল জরিমানার শিকার হবেন।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ব্যাংক একাউন্ট তলবের ক্ষমতা এসইসি পেলে তা ভালো। কারসাজিকারীদের দ্রুত সনাক্ত করা যাবে এতে করে। কিন্তু এ ক্ষমতা না পেলে কারসাজিকারীদের সনাক্ত করা যাবে না তা নয়। এছাড়া এসইসি সংশ্লিস্ট কেউ গোপন তথ্য ফাঁস করলে জেল জরিমানার শিকার হবে। এর আগেও একই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু প্রয়োগের অভাবে এসইসি’র উচ্চ পর্যায়ের লোকজন ইতিপূর্বে কারসাজির সঙ্গে জড়িয়েছে।
একাধিক বিনিয়োগকারী ক্ষোভের সঙ্গে শেয়ারনিউজ২৪ডটকমকে জানান, পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। কিন্তু কারসাজির সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি। এছাড়া মাঝেমধ্যেই পুঁজিবাজার কারসাজি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অভিযোগ উঠে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে এসইসি যথাযথ ভূমিকা পালন করে না বলে দাবি বিনিয়োগকারীদের। তাই ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই এসইসি’র ক্ষমতার প্রয়োজন আছে। এসইসি যদি তার বর্তমান ক্ষমতাবলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা বাড়ানো দোষের বিষয় না। তবে ক্ষমতা বাড়ালেই চলবে না। ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে তার প্রমাণ দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারধারন সংক্রান্ত নির্দেশনার বিরুদ্ধে রিট আবেদন পরিচালনা করতে গিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবি ড. কামাল হোসেন বলেছিনে, এসইসি হচ্ছে সুপার সুপার মার্শাল পাওয়ারের অধিকারী। তার কথা থেকে বোঝা যায় এসইসি কতটা ক্ষমতার অধিকারী। তাহলে কি আর নতুন করে ক্ষমতা বৃদ্ধির দরকার আছে? এমনই প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের মনে।
এদিকে জাতীয় সংসদে এসইসি’র ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজারে ঝুঁকি কমানোর লক্ষে সংশোধিত আইন উপস্থাপন করা হলে তার বিরোধীতা করেন সতন্ত্র সাংসদ ফজলুল করিম।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ঝুঁকিমুক্ত করে কি হবে? রোগী মারা গেছে। তিনি বলেন, প্রচলিত আইনে আগে কারসাজিকারীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। না হলে আইন সংশোধন করার প্রয়োজন নাই।
বিনিয়োগকারী ছোলায়মান সর্দার বলেন, এসইসি নামেই ক্ষমতার অধিকারী, ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দুর্বল। অনেকটা যুক্তরাজ্যের মুকুটহীন রাণীর মতো বলে মনে করেন তিনি। তাই যতটুকু ক্ষমতা আছে তার প্রয়োগ করা দরকার বলে বিনিয়োগকারী ছোলায়মান মনে করেন।
এ ব্যাপারে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, ক্ষমতা থাকা গৌরবের কিছু নয়। ক্ষমতা প্রয়োগই আসল। রেগুলেটর হিসাবে এসইসি’র ক্ষমতা থাকা জরুরি। তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সক্রিয় থাকতে হবে।