চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই মালয়েশিয়ায় প্লান্টেশন (কৃষি) পেশায় যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩০ হাজার প্লান্টেশন কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএমইটির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে কর্মীদের নিবন্ধন শুরু হবে।তিনি বলেন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার সময়সূচি ও করণীয় সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে। যে কোন স্থান হতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র হতে এই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দেশে ফিরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা জানান। রবিবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে চাহিদাপত্র আসবে।চাহিদা পত্র আসার দুইমাসের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশনসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই কর্মীরা মালয়শিয়া যেতে পারেব। প্রথম পর্যায়ে শ্রমিকদের ২ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়েছে। এরপর পর্যায়েক্রমে ২ বছর ও এক বছর কাজ করার সুযোগ পাবে। দেশের সকল জেলা হতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের সমান সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ডেমোগ্রেফিক কোটা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার কোটা নির্ধারণ করা হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় জেলা কোটা পুরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ জেলার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে যাবে।
গত ২৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় দুই দেশের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসময় মানবপাচার রোধেও একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দুই দেশে। জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এস সুব্রামানিয়াম। মানবপাচার রোধ বিষয়ে অপর এক চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামউদ্দীন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানান, জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়ায় কোনভাবেই তৃতীয় পক্ষের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি দালাল ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কেউ যেন দালাল ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির খপ্পরে না পড়েন সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে নিবন্ধন করা হবে। এতে কোন অর্থ লাগবে না।
মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় প্লান্টেশন পেশায় যেতে আগ্রহীদের বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। কৃষি কাজে অভিজ্ঞতা থাকবে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। গ্রামের প্রকৃত বাসিন্দারাই এতে অগ্রাধিকার পাবেন। কর্মীর উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট হতে বলে। শরীরের ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে কর্মীকে সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ একটি কার্ড দেওয়া হবে। ঐ কার্ডে কর্মী বাছা্ইয়ের জন্য নির্ধারিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের নাম, স্থান ও তারিখ উল্লেখ থাকবে। সারা দেশের ১৩ টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে এই বাচাই কার্যক্রম চলবে।কর্মী বছাইয়ের সময় শারীরিক যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।সেই সঙ্গে কর্মীর ছবসহ ফিঙ্গার প্রিন্টগ্রহণ করা হবে। তখন মেডিকেল টেস্টও করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। এরপর দীর্ঘ ৪ বছর বাংলাদেশ সেদেশে কোন জনশক্তি রপ্তানি করতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে মালয়েশিয়ায় ফের কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে অবশেষে সরকারিভাবে লোক নিতে সম্মত হয় মালয়েশিয়া।