প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছেলেদেরকে সৎ ছেলে হিসেবে প্রচার করছেন। কিন্তু তার ছেলেদের নামে মানি লন্ডারিং মামলা হয়েছে বিদেশের আদালতে। আর যদিই বা তার ছেলেরা এত সৎ হয়ে থাকে লন্ডনের মাটিতে তারেক জিয়া কয়েকটি বাড়ি, গাড়ি, রেষ্টুরেনন্টের মালিক হয় কিভাবে। এ তো বিরোধী দলীয় নেত্রীর চোরের মায়ের বড় গলার মত গলাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন চালের দাম ছিল ১০ টাকা কেজি। এরপর চারদলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশব্যাপী লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করলে চালের দাম ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হয়। তখন মানুষের দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে। মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতা এসে চালের দাম ২২ থেকে ২৫ টাকায় নিয়ে এসেছে। শ্রমজীবি লোকজন দু’বেলা দু মোটা চালের ভাত খেতে পারছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, গত বছর আমাদের সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ২৩ কোটি ১২ লাখ বই বিনামূল্যে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারী ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী গরীব, অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। বিনামূল্যে ঔষধ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করেছে। ৭৮ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে এইসব ই-সেবা তথ্যকেন্দ্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। গত জোট সরকারের আমলে মৌলভীবাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম, সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর পেটুয়া বাহিনীর লুটতরাজ, চাঁদাবাজি ও দমন পীড়নের হাত থেকে রেহাই পায়নি তাদের কর্মী ঠিকাদার নুরুজ্জামান। তাদের ক্ষমতাসীন সময়ে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী সহ সংখ্যালঘু হিন্দু, উপজাতি এবং চা শ্রমিকদের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতন, নিপীড়ন। খাসিয়া পুঞ্জির ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে চা শ্রমিকদের উন্নয়নে রেশনিং প্রথা চালু করা হয়ছিল। ফলে ১০ হাজার চা শ্রমিক নিয়মিতভাবে রেশন পাচ্ছে। তাদের আর্ত সামাজিক উন্নয়নে বেতন, ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। চা শ্রমিকদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য বাগানে বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোকে পর্যায়ক্রমে সরকারী করণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সৈয়দ মহসীন আলী এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড: মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুর রহমান, আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, এড: নওয়াব আলী আব্বাস খান এমপি, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক এমপি, প্রবাসী নেতা এম এ রহিম সিআইপি, সাবেক মহিলা এমপি হোসনে আরা ওয়াহিদ, জুড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা বদরুল ইসলাম. রাজনগরের মিছবাউদ্দোজা ভেলাই, কুলাউড়ার রফিকুল ইসলাম রেনু, কমলগঞ্জের মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মসুদ আহমদ, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন, পৌর আওয়ামীলীগ সম্পাদক এমদাদুল হক মিন্টু, জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি সৈয়দ মফচ্ছিল আলী, জেলা যুবলীগ সভাপতি ফজলুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহবায়ক নুরুল ইসলাম প্রমুখ। জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপি, মুহিবুর রহমান মানিক মানিক এমপি, শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, মাহমুদ উস সামাদ কয়েস এমপি, এড: আবু জাহির এমপি, সিলেট জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুস জহুর চৌধুরী সুফিয়ান, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা: মুসফিক হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিষ্টার ইমন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ প্রমুখ। জনসভায় যোগ দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল পরিদর্শন ও নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী মৌলভীবাজার আবহাওয়া অফিস এবং মুক্তিযোদ্ধা ভবন ছাড়াও আরো ৮টি স্থাপনা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে শ্রীমঙ্গল বিজিবি হেলিপ্যাডে অবতরন করেন এবং সেখানে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরও উদ্বোধন করেন। সেখানে মণিপুরী সম্প্রদায়ের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীমঙ্গলে অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন এবং চা-নিলাম বোর্ড বাস্তবায়নের ঘোষনা দেন।