বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংলাপে অংশ না নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দলের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কমিশনকে চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন।
চিঠি দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে কেন বসতে পারছি না তার কারণ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিবের চিঠি সিইসি ও সচিবকে দেওয়া হয়েছে। ইসির সংলাপ বর্জনের সিদ্ধান্ত ১৮দলীয় জোটেরও।
সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু সমাধান না হলে স্বাধীন ইসি দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন উপ নির্বাচনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে।
ইসির মনোভাব দেখে মনে হয়, তারাও নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না।
বিএনপি মহাসচিব পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ছলে বলে কৌশলে যে কোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ একটি দলীয় সরকারের সীমাহীন ক্ষমতা ও প্রভাবের মুখে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা যে কতো অর্থহীন তা পূর্বেকার কমিশন কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছিল এবং পূর্বেকার কমিশনের কেউ কেউ এখনো তা প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হলে তারা জনগণের সমর্থন লাভে সক্ষম হবে। জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পর্কিত উপরোলিখিত সমস্যা ও বিষয়সমূহ জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সমাধান করার চেষ্টা না করে শুধুমাত্র ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ বা নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের মতো আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।
সংলাপের জন্য নির্ধারিত দিনের দুই দিন আগে এ অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হলো।
রোববার বিকাল ৩টায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্র্ধারণ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কথা ছিল।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বর্তমান কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি সমালোচনা করে আসছে।
সোমবার শুরু হওয়া সংলাপে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি সংলাপে অংশ নেয় নি।
এছাড়া ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনও সংলাপে আসে নি।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইসির সংলাপে এলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপে যায় নি বিরোধী দল।
জামায়াতে ইসলামীসহ সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী সব দলের নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দলের উদ্দেশ্য (জামায়াত) সংবিধানের মূল চেতনা ও সারমর্মের পরিপন্থী যা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই জমায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা বিশেষভাবে জরুরি।
সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
তিনি বলেন, এলাকাভিত্তিক একক প্রতিনিধিত্ব’ বাদ দিয়ে ‘জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু, নির্বাচনী ব্যয় ৫ লাখ থেকে কমিয়ে ৩ লাখ টাকা ও জামানত ৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করে কমিউনিস্ট পার্টি।
সীমানা পুননির্ধারণে জনসংখ্যা, যাতায়ত ব্যবস্থা ও অতীত নির্বাচনী অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয় সিপিবি।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লাবলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুব আলম, এ এন এরশাদ ও রহিন হোসেন প্রিন্স সংলাপে অংশ নেন।
বিদ্যমান সীমানাতেই সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবে না কল্যাণ পার্টি। সেই সঙ্গে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের দাবিও জানান সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা।
নবম সংসদ নির্বাচনে কল্যাণ পার্টিও ৩৯ জন প্রার্থী অংশ নিলেও সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ৩৯ সংসদীয় আসনে ২১ হাজার ৬০৯টি ভোট পেয়েছিল। যা মোট ভোটের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল পিডিপির চেয়ারম্যান ফেরদৌস আহমদ কোরেশী নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার প্রস্তাব দেন।
একাধিক দিনে ভোট নেওয়া ও জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সুপারিশ করেন তিনি।
কখনো বলিনি যে সেনা মোতায়েন হবে না: সিইসি
কল্যাণ পার্টিও সঙ্গে সংলাপের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, “আমি কখনো বলিনি যে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে না। খবরের কাগজে আমার বক্তব্য সঠিকভাবে রিফ্লেক্টেড হয় না।”
আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে মোতায়েন করা হয় বলে জানান তিনি।