সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কের উপকন্ঠে দুটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছে । আহতের সংখ্যাও বহু।
সকালে জারামানা নামে ওই এলাকায় প্রায় একই সময় ঘটা দুটি বিস্ফোরণকে সিরিয়ার সরকার সন্ত্রাসীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে।
এই শহরটিতে প্রধানত দ্রুজ ও খ্রিস্টানদের বাস এবং তারা এখন পর্যন্ত বাশার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহে যোগ দেয় নি।
বুধবার ভোরে এখানে সরকারি সৈন্য ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইও হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই হামলার যে ছবি দেখানো হয়েছে, তাতে ঘটনার ভয়াবহতা স্পষ্ট। দামেস্কের এই শহরতলীর প্রধান রাস্তার ওপর বিস্ফোরণে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ি। চারিদিকে ছড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞের আলামত।
সরকার এই হামলার জন্য দায়ী করছে বিদ্রোহীদের, যারা প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাতের জন্য লড়াই করছে।
দামেস্কের এই এলাকার দ্রুজ এবং খ্রিস্টানরা উভয়েই সংখ্যালঘু, এবং সাধারণভাবে তাদের প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করা হয়।
জারামানা এলাকায় এটাই এ ধরণের প্রথম হামলা নয়। এর আগেও এখানে এরকম সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। সে কারণে জারামানা এলাকায় নিরাপত্তার যথেষ্ট কড়াকড়ি ছিল।
সরকারপন্থী সশস্ত্র মিলিশিয়ারা এখানকার রাস্তাঘাট দিনে রাতে পাহারা দেয়।
দামেস্ক থেকে বিবিসির সংবাদদাতা লিনা সিনজাব জানান, বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে সবার প্রশ্ন এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে এরকম হামলা হতে পারলো।
”এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা এখনো বাড়ছে। তবে এটাও মনে করিয়ে দেয়া দরকার যে এসব এলাকায় সরকার কিছু স্থানীয় কমিটি বা তাদের ভাষায় পপুলার কমিটি গঠন করে দিয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় পাহারা দেওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কাজেই এটা বোঝা মুশকিল হামলাকারীরা কিভাবে গাড়ি বোঝাই বিস্ফোরক নিয়ে সেখানে ঢুকতে পারলো।”
সরকার এই হামলার জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করলেও সিরিয়ার বিদ্রোহীরা এরকম ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা সব সময় অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তাদের হামলার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট আসাদের বাহিনী। সংখ্যালঘুরা নয়।
কিন্তু সিরিয়ার এই সংঘাত এখন ক্রমশই যেভাবে এক গোত্রগত সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে, তাতে এ ঘটনায় উভয় তরফেই সন্দেহ আর অবিশ্বাস যে বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এমাসের শুরুতে একই রকম হামলা হয়েছে সরকারপন্থী আলাওয়াইট এলাকাগুলিতে। বিবিসির লিনা সিনজাব বলছেন, হামলার ব্যাপারে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা মুশকিল।
তিনি বলছেন এ ঘটনার দু রকমের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। একটা তত্ত্ব হচ্ছে বিদ্রোহীরা এই সংখ্যালঘুদের ভয় দেখাতে চায়, যাতে তারা সরকারের বাহিনীতে যোগ না দেয়। আরেকটা পাল্টা ব্যাখ্যা হচ্ছে, সরকারই এসবের পেছনে আছে, কারণ সরকার চাইছে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতংক তৈরি করতে, তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে। দুপক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে এরকম পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ তুলছে।
তবে, তিনি বলছেন, এটা বলা আসলেই খুব শক্ত, কারা এসবের পেছনে আছে।
এদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বুধবার দেশের উত্তর-পশ্চিমে তুরস্ক সীমান্তের কাছে একটি যুদ্ধ বিমান গুলি করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে।
বিদ্রোহীরা বলছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। এছাড়া ফ্রী সিরিয়ান আর্মি দামেস্কের দক্ষিণে সায়িদা জয়নাব অঞ্চলে একটি বিমান ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দামেস্কে এবং দেশের অন্যান্য সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলে বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। [বিবিসি]