স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, “নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সরকার দাবি না মেনে কর্মসূচিতে বাধা দিলে লাগাতার হরতাল দেয়া হবে।”
বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে ১৮ দলের সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সরকারের অযোগ্যতা, দুঃশাসন ও গণবিরোধী কর্মকাণ্ড, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য ও রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর ১৮ দলীয় জোট।
৪৫ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। সমাবেশে তিনি আগামী ৬ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নে কী করা হবে- সেসব প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ৯ ডিসেম্বর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে রাজপথ অবরোধ করা হবে। সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে। তার আগে ৬ ডিসেম্বর সারা দেশে গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে সভা-সমাবেশ করবে ১৮ দল।
১২ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজয় দিবস উপলক্ষে নিজ নিজ দলের কর্মসূচি পালন এবং ২৩ ডিসেম্বর সরকারের দুঃশাসন-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে গণবিক্ষোভ করা হবে।
এছাড়া ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং অন্য সব মহানগরে ১৮ দলের নেতাদের নেতৃত্বে গণসংযোগ কর্মসূচিরও ঘোষণা আসে।
সমাবেশে খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, “ঘোষিত কর্মসূচি পালনে সরকার বাধা দিলে পরিণতি শুভ হবে না। তখন হরতাল অবরোধ দিতে বাধ্য হবো।”
“তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ১৭৫ দিন হরতাল করেছিল আওয়ামী লীগ। একই দাবিতে আমরা মাত্র ১৩ দিন হরতাল করেছি। সরকার দাবি না মানলে তাদের মতো কর্মসূচি দিয়েই জবাব দেয়া হবে। প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল হবে”- বলেন জোটনেত্রী।
ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মা মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য শুরু করেন খালেদা।
সরকারকে ‘দুর্নীতিবাজ’ উল্লেখ করে খালেদা বলেন, “সরকার ক্ষমতায় এসে কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। একই কারণে পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।” আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পদ্মা ও আরিচা দু’টি সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে কুইক রেন্টালের নামে কুইক টাকা কামিয়ে নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। অথচ জনগণকে বেশি বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। সরকার এর জবাব দিতে পারবে না।”
খালেদা জিয়া বলেন, “মহাজোট সরকার দুর্নীতিবাজ ও বিশ্বচোর। তাদের দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হবে না। এজন্য তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “হলমার্ক, শেয়ারবাজার ও ডেসটিনির টাকা চুরি করে সরকার দেশকে দেউলিয়া করেছে। তারা লুটকরা টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। কাদের কাছে টাকা গেছে, সে তথ্য আমাদের কাছে আছে। সময়মতো প্রকাশ করা হবে।”
খালেদা জিয়া বলেন, “দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন নয়, এটি সরকারের পদলেহী সংস্থা। এটি মিথ্যাবাদী প্রতিষ্ঠান। সরকার যাই বলে, তারা তাই করে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়াই এই প্রতিষ্ঠানের কাজ। দেশের মানুষ দুদককে বিশ্বাস করে না।”